Header Ads

ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রয়ােজনীয়তা

ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা
ইসলামী রাষ্ট্র একমাত্র ন্যায় ও ইন্সাফনির্ভর রাষ্ট্র। মানবজাতির নয় শুধু; সৃষ্টিকূলের সব ধরণের কল্যাণ একমাত্র ইসলামী রাষ্ট্রের মাঝে নিহিত। পৃথিবীতে ইসলাম ব্যতীত আরাে অনেক রাষ্ট্রব্যবস্থা রয়েছে। অনেক রাষ্ট্রদর্শন আছে। কিন্তু কোন রাষ্ট্রব্যবস্থা পরিপূর্ণ ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। মানবজাতির জন্য কল্যাণের কোন বার্তা বয়ে আনতে পারেনি। কারণ ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা আল্লাহপ্রদত্ত রাষ্ট্রব্যবস্থা। পৃথিবীবাসীর জন্য মহান আল্লাহ তা'আলা এই রাষ্ট্রব্যবস্থা নবী রাসুলদের মাধ্যমে পাঠিয়েছেন। সৃষ্টিজীব সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা সর্বাধিক জ্ঞ্যাত। সৃষ্টিজীবের কল্যাণ-অকল্যাণ, শান্তি-সংঘাত, ইহ ও পারলৌকিক মুক্তি বিষয়ে আল্লাহ তাআলা ব্যতীত আর কেউ জানে না। সংগত কারণেই একমাত্র তাঁর দেওয়া জীবনবিধান এবং রাষ্ট্রব্যবস্থাই হবে ন্যায় ও ইনসাফনির্ভর। কল্যাণ ও মুক্তির বার্তাবাহী। সাম্য ও মানবিকতার দিশারী। শান্তি ও শৃঙ্খলার উজ্জ্বল নিদর্শন।
ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করবে। সেখানে দেহ ও আত্মার সমন্বিত কল্যাণ সাধিত হবে। সর্ব শ্রেণি পেশার মানুষ শান্তি সম্মান ও নিরাপত্তা লাভ করবে। সেখানে মানুষ অন্নের জন্য হাহাকার করবে না, বস্ত্রের অভাবে সম্মান হারাবে না, বাসস্থানের অভাবে ছিন্নমূল জীবন যাপন করবে না। মানুষ চিকিৎসার অভাবে ধুকে ধুকে মরবে না। শিক্ষার অভাবে মুর্খ-অজ্ঞ থাকবে না।
 সেখানে দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার চলবে না। সে রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে উঠবে ঈমান আকিদা ও ইনসাফের ভিত্তিতে। সে রাষ্ট্রে প্রতিটি মানুষের মাঝে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকবে। পরস্পরে ভালবাসার সম্পর্ক সৃষ্টি করবে। প্রতিবেশী ও সংখ্যালঘুর অধিকার সংরক্ষিত থাকবে। সর্বোপরি যে রাষ্ট্রের মডেল হলাে রহমতে আলম সা. এবং খােলাফায়ে রাশেদীনের রাষ্ট্রব্যবস্থা।

ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রয়ােজনীয়তা

ইসলামী রাষ্ট্র যেহেতু সকল সৃষ্টিজীবের কল্যাণ নিশ্চিত করে, তাই এর প্রতিষ্ঠার প্রয়ােজনীয়তা স্বাভাবিকভাবেই প্রতিয়মান হয়। এরপরও এমন কিছু কারণ ও বিষয়াদি রয়েছে, যা ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার গুরুত্বকে আরাে অনিবার্য করে তােলে। নিম্নে সংক্ষেপে এমন কিছু কারণ উল্লেখ করা হলাে। ইসলামী কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রয়ােজনীয়তার অনেক দিক রয়েছে। এখানে সংক্ষিপ্ত পরিসরে এর বিস্তারিত বিবরণ সম্ভব নয় বিধায় মাত্র কয়েকটি দিক তুলে ধরা হলাে। ইবাদতের পূর্ণাঙ্গতার জন্য ইসলামী রাষ্ট্র প্রয়ােজন। আল্লাহ তা'আলা মানুষকে ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। তিনি ইরশাদ করেনআমি জীন ও মানুষকে একমাত্র আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি।' (১৮।
ইসলাম যেহেতু একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, তাই এর ইবাদতের পরিধিও অনেক বিস্তৃত। মানুষের ব্যক্তি জীবন থেকে নিয়ে পরিবার, সমাজ এমনকি রাষ্ট্রীয় জীবন পর্যন্ত ইবাদতের নির্দেশনা রয়েছে। আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন-হে ঈমানদারগণ! তােমরা পরিপূর্ণরূপে ইসলামে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করাে না। কেননা সে তােমাদের প্রকাশ্য শত্রু।' ইবাদতের এই বিস্তৃত ক্ষেত্রে এমন কিছু ইবাদতও রয়েছে, যেগুলাে ব্যক্তিগতভাবে পালন করা সম্ভব নয়। মানুষের দৈনন্দিন কাজের মধ্যে- লেনদেন, ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি, শ্রমনীতি, চাকুরি, কৃষি, কল-কারখানা, বিবাহতালাক, ওয়াকফ, মিরাছ, বন্ধক, ঋণ, মামলা-মােকদ্দমা ইত্যাদি বিষয়গুলাে রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কিত। এগুলাে ইসলামী পদ্ধতিতে পালন করতে হলে ইসলামী রাষ্ট্র প্রয়ােজন। তাই উপরােক্ত আলােচনা দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যায় যে, ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকেন্দ্রীক এমন অনেক ইবাদত রয়েছে, যেগুলাে গােটা সমাজব্যবস্থাকে ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে গড়ে তােলার মাধ্যমেই পালন করা সম্ভব। ব্যক্তিগতভাবে পূর্ণাঙ্গ ইসলামী জীবন যাপন সম্ভব নয়। তাই ইবাদতের পূর্ণাঙ্গতার জন্য ইসলামী রাষ্ট্র প্রয়ােজন।

ইসলামী বিধানাবলী কার্যকর করার জন্য ইসলামী রাষ্ট্র প্রয়ােজন

ইসলামী জীবন বিধানে বিচার-ফয়সালা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইসলাম মানব জীবনের প্রতিটি দিক বিভাগের জন্য বিস্তারিত বিধিবিধান দিয়েছে। এর অনেকগুলাের বাস্তবায়নই সার্বভৌম কর্তৃত্ব বা তার ছত্রছায়া দাবি করে। ইসলাম দেওয়ানী ও ফৌজদারী উভয় ধরণের আইন-কানুন এবং তা লঙ্ঘনের জন্য দণ্ডবিধি প্রদান করেছে। কিছু ক্ষেত্রে এসব আইন সুস্পষ্ট ভাষায় বর্ণিত হয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে মূলনীতি প্রদান করা হয়েছে এবং বিস্তারিত ও খুটিনাটি আইন প্রণয়নের ভার যথাযথ কর্তৃপক্ষকে দেয়া হয়েছে। এসব মূলনীতির আলােকে দীনি সূত্র নিয়ে গবেষণা করে মুজতাহিদগণ আইন-কানুনের এক বিশাল ভাণ্ডার উদ্ঘাটন করেছেন। আর এসব আইন-কানুন কেবল উত্তম করণীয় হিসেবে, নছিহত হিসেবে প্রদান করা হয়নি; বরং বাস্তব রূপায়ণের জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর এগুলাের বাস্তবায়ন একমাত্র ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলেই হবে

ইসলামের জিহাদ বাস্তবায়নের জন্য ইসলামী রাষ্ট্র প্রয়ােজন
জিহাদ ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। কুরআন এবং সুন্নাহ-এ জিহাদের নির্দেশ সম্বলিত বহু আয়াত রয়েছে। তবে আধুনিক জঙ্গিবাদ আর ইসলামের
জিহাদ এক জিনিস নয়। জঙ্গিবাদের সাথে ইসলামের বিস্তর ফারাক রয়েছে।  ইসলামের জিহাদ বা সশস্ত্র যুদ্ধ একটি রাষ্ট্রনৈতিক বিষয়। কুরআন হাদিস থেকে  এটা সুস্পষ্ট যে, জিহাদ প্রচলিত যুদ্ধের মতাে যােদ্ধাগােষ্ঠী নিয়ণের কোন ধরণের  সংঘর্ষর নয়। বরং জিহাদ এমন এক যুদ্ধ, যাতে সেনাবাহিনী ও প্রস্তুতির প্রয়ােজন রয়েছে যা রাষ্ট্রের অপরিহার্যতাকেই প্রমাণ করে।শুধু তাই নয়, চুক্তি সম্পাদন, চুক্তি ভঙ্গকারী শত্রুকে শায়েস্তা করণ, যুদ্ধাপরাধীর শাস্তির বিধান এবং যুদ্ধের মাধ্যমে দমন করে জিজিয়া প্রদানে বাধ্যকরণ ইত্যাদি বিষয় এক নিয়মিত, সুশৃঙ্খল ও শক্তিশালী সশস্ত্রবাহিনীর অপরিহার্যতাকেই তুলে।যা  কেবল রাষ্ট্রের পক্ষেই গড়ে তােলা সম্ভব।

ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামী রাষ্ট্র প্রয়ােজন।

বর্তমান সমাজে ন্যায় ও ইনসাফের যথেষ্ট অভাব। ন্যায়ের আশায় এবং ইনসাফের প্রত্যাশায় মানুষ এক নেতার পরিবর্তে আরেক নেতার কাছে যাচ্ছে। এক তন্ত্র বাদ দিয়ে আরেক মন্ত্র গ্রহণ করছে। কিন্তু ন্যায়-ইনসাফ সুদূর পরাহত। রাষ্ট্রীয় আইন-আদালত, সামাজিক বিচার-আচার, প্রশাসনিক দেন- দরবার, পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সালিস-মিমাংশা কোথাও ন্যায় ও ইনসাফ নেই। তাই সমাজে ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে হলে ইসলামী রাষ্ট্রের বিকল্প নেই। ইতিহাসের আলােকে দেখা যায়- ইসলামী রাষ্ট্র যেখানে প্রতিষ্ঠিত ছিল সেখানে ন্যায় এবং ইনসাফও ছিল সুপ্রতিষ্ঠিত। ন্যায় এবং ইনসাফ প্রতিষ্ঠার গুরুত্বারােপ এবং এর লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে ইসলাম যে কঠোরতা প্রদর্শন করেছে, তার নজির অন্য কোথাও নেই।

মানুষ এবং সৃষ্টিজীবের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামী রাষ্ট্র প্রয়ােজন।
ইসলাম এমন এক ধর্ম, যেখানে সকল শ্রেণি-পেশা, ধর্ম-বর্ণের মানুষের অধিকার নিশ্চিত করে। শুধু মানুষ নয়, ইসলাম সৃষ্টিজীবের অধিকার প্রতিষ্ঠায়ও সােচ্চার। আজ নারীরা তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত, অথচ ইসলাম তাদেরকে একটু বেশিই অধিকার দিয়েছে। সংখ্যালঘুরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত, তারা বারবার নির্যাতিত হচ্ছে। ইসলাম তাদেরকেও ন্যায্য অধিকার দিয়েছে। ইসলামী রাষ্ট্রে তাদের জন্য রয়েছে জান-মাল, ইজ্জত-আব্রুসহ সব কিছুর নিরাপত্তা। এ ছাড়াও, কৃষক, শ্রমিক, গরিব, মেহনতি মানুষেরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ইত্যাদি মৌলিক অধিকারহারা। অনেক বনি আদম ধুকে ধুকে মরছে। অথচ, একমাত্র ইসলামী রাষ্ট্রই এদেরকে দিতে পারে মুক্তির গ্যারান্টি।

No comments

Comments System

Theme images by merrymoonmary. Powered by Blogger.