নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে ১০ দফা দাবি
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আজ
শুক্রবার মহাসমাবেশ করে
ইসলামী আন্দোলন। নিরপেক্ষ ও
গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য
এবার ১০ দফা
দাবি দিলেন ইসলামী
আন্দোলন বাংলাদেশের আমির
ও চরমোনাইয়ের পীর
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল
করিম। তিনি সংসদ
ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি
করেছেন।
আজ শুক্রবার বিকেলে
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী
আন্দোলনের এক মহাসমাবেশে সৈয়দ
মুহাম্মদ রেজাউল করিম
এ দাবি জানান।
তিনি বলেন, ৫
জানুয়ারির নির্বাচনে জনগণ
ভোট দিতে যায়নি।
বর্তমান সংসদের কোনো
নৈতিক বৈধতা নেই।
এই অবৈধ সংসদ
বহাল রেখে কোনো
নির্বাচন দেশবাসী মেনে
নেবে না।
দুর্নীতি, দুঃশাসন, সন্ত্রাস ও
কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সুষ্ঠু,
নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে’
এই সমাবেশ হয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন
সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল
করিম।
নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবি জানান ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ রেজাউল করিম।
আন্দোলনের ১০ দফা
১. নির্বাচনের তফসিল
ঘোষণার আগে
জাতীয় সংসদ
ভেঙে দিতে
হবে।
২. সব নিবন্ধিত
রাজনৈতিক দলের
মতামত নিয়ে
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে
হবে।
৩. বর্তমান নির্বাচন
কমিশন বাতিল
করে নতুন
নির্বাচন কমিশন
গঠন করতে
হবে।
৪. তফসিল ঘোষণার
পর থেকে
নির্বাচিত সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পূর্ব
পর্যন্ত সশস্ত্র
বাহিনী মোতায়েন
করতে হবে
এবং নির্বাচনের
দিন সশস্ত্র
বাহিনীর হাতে
বিচারিক ক্ষমতা
দিতে হবে।
৫. নির্বাচনে সব
দলের জন্যে
সমান সুযোগ
তৈরি করতে
হবে। রেডিও,
টিভিসহ সব
সরকারি-বেসরকারি
গণমাধ্যমে সবাইকে সমান সুযোগ দিতে
হবে এবং
রাজনৈতিক দলের
নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সব ধরনের হয়রানি
বন্ধ করতে
হবে।
৬. দুর্নীতিবাজদের নির্বাচনে
অযোগ্য ঘোষণা
করতে হবে।
৭. নির্বাচনে ইভিএম
ব্যবহার বন্ধ
রাখতে হবে।
৮. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা,
জাতীয় সংহতি
ও কার্যকর
সংসদ প্রতিষ্ঠায়
জাতীয় নির্বাচনে
সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচন ব্যবস্থা
প্রবর্তন করতে
হবে।
৯. কোটা সংস্কার
অন্দোলন এবং
নিরাপদ সড়ক
আন্দোলনে গ্রেপ্তার
ছাত্রদের মুক্তি
এবং তাদের
বিরুদ্ধে দায়েরকৃত
সব মামলা
প্রত্যাহার করতে হবে।
১০. গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের
উদ্দেশ্যে প্রণীত বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা
আইন বাতিল
করতে হবে।
এ সব
দাবি আদয়ের লক্ষ্যে ১২
অক্টোবর ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল,
১৪ অক্টোবর সব
জেলায় বিক্ষোভ, ১৬
অক্টোবর রাষ্ট্রপতির কাছে
স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচির ঘোষণা
করা হয়।
এর আগে পৃথক কর্মসূচিতে বিএনপি এবং ড. কামাল হোসেন ও বদরুদ্দোজা চৌধুরীর জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়াও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে একই ধরনের দাবি জানিয়েছিল। এর মধ্যে ঐক্য প্রক্রিয়া পাঁচ দফা, আর বিএনপি ৭ দফা দাবি জানিয়েছিল।
এর আগে পৃথক কর্মসূচিতে বিএনপি এবং ড. কামাল হোসেন ও বদরুদ্দোজা চৌধুরীর জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়াও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে একই ধরনের দাবি জানিয়েছিল। এর মধ্যে ঐক্য প্রক্রিয়া পাঁচ দফা, আর বিএনপি ৭ দফা দাবি জানিয়েছিল।
মুফতি রেজাউল
করিম বলেন, বিগত
১০ বছরে দেশে
কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি।
স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোতেও জনগণ
তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট
দিতে পারেনি। নির্লজ্জভাবে মানুষের ভোটের
অধিকার কেড়ে নেওয়া
হয়েছে। নির্বাচন কমিশন
ও প্রশাসন কেউই
নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন
করেনি। মানুষ আর
তামাশার নির্বাচন দেখতে
চায় না। আগামী
নির্বাচনে অন্যায়-অবিচার,
জুলুমকারীদের ও দুর্নীতিবাজদের প্রত্যাখ্যান করার
আহ্বান জানান তিনি।
একাদশ জাতীয়
নির্বাচন সামনে রেখে
আয়োজিত এই সমাবেশের মাধ্যমে ইসলামী
আন্দোলন নিজের অবস্থান জানান
দিতে চেয়েছে। সমাবেশে সারা
দেশ থেকে নেতা-কর্মীদের ঢাকায়
আনা হয়। তাদের
অনেকের হাতে ছিল
দলীয় প্রতীক হাতপাখা। জুমার
নামাজের পর সমাবেশ
শুরু হলেও সকালেই
উদ্যান ভরে যায়।
বিপুলসংখ্যক কর্মী-সমর্থক
বাইরে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনের
সড়কে অবস্থান নেন।
এ সময় ওই
সড়কে যানবাহন চলাচল
বন্ধ হয়ে পড়ে।
ইসলামী আন্দোলনের জ্যেষ্ঠ নায়েবে
আমির সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ বিডিআর
বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭
জন সেনা কর্মকর্তার হত্যা,
টিপাইমুখে ভারতের বাঁধ
নির্মাণ, ব্যাংক, শেয়ারবাজারে লুটপাট,
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করে
সুন্দরবন ধ্বংস এবং
২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামকে অভিযানের মুখে
বিতাড়িত করার জন্য
সরকারকে দায়ী করে
এর সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, ‘শাপলা
চত্বরে হেফাজতে ইসলামকে, আমাদের
ভাইদের গুলি করে
হত্যা করেছে। রক্তের
দাগ কখনো মোছা
যাবে না। কওমি
শিক্ষার সনদ দিয়ে
এই রক্ত ঢাকা
যাবে না।’
নায়েবে আমির
মুফতি ফয়জুল করিম
আওয়ামী লীগ ও
বিএনপির কড়া সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, ‘১৯৯১
ও ২০০১ সালে
বিএনপিকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলাম। তারা
ব্যর্থ হয়েছে। আর
এখন আওয়ামী লীগ
নির্যাতনের স্টিম রোলার
চালাচ্ছে, বাকস্বাধীনতা হরণ
করছে, গুম, খুন
চলছে। এর মধ্যে
আর থাকতে চাই
না। সোনার বাংলা,
ডিজিটাল বাংলাদেশের খেলা
শেষ। আগামীর বাংলাদেশ হবে
ইসলামের বাংলাদেশ।’
ইসলামী আন্দোলন কেন
কোনো জোটে যাচ্ছে
না, তার ব্যাখ্যা দেন
দলের মহাসচিব ইউনূছ
আহমাদ। তিনি বলেন,
‘ইসলামী আন্দোলন এ
দেশের মানুষের শেষ
সম্বল। এটা শেষ
করতে চাই না।
এ জন্য কোনো
দুর্নীতিবাজের
সঙ্গে আমরা জোট
করি না।’সমাবেশে আরও
বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় নেতা
নুরুল হুদা ফয়েজী,
আশরাফ আলী আকন,
এ টি এম
হেমায়েত উদ্দিন, মাহবুবুর রহমান,
খালেদ সাইফুল্লাহ, গাজী
আতাউর রহমান, ইমতিয়াজ আলম,
আতিকুর রহমান প্রমুখ।
No comments