আল-কোরআনে আল্লাহ্ জিকির প্রসঙ্গ
فَاذْكُرُونِي أَذْكُرْكُمْ وَاشْكُرُوا لِي
وَلَا تَكْفُرُونِ
“তোমরা
আমার জিকির (স্মরণ) কর, আমিও তোমাদের কে ‘জিকির’ (স্মরণ) করবো। এবং আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর; অকৃতজ্ঞ হয়ো না।”( সুরা আল-বাকারা আয়াত ১৫২/২)
(٢٨) أَلَا بِذِكْرِ اللَّـهِ تَطْمَئِنُّ
الْقُلُوبُ لَّذِينَ
آمَنُوا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُم بِذِكْرِ اللَّـهِا
যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের
অন্তর আল্লাহর যিকির দ্বারা প্রশান্তি
লাভ করে;
জেনে রাখ,
আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তর সমূহ শান্তি পায়। ( সুরা রাদ আয়াত ২৮/১৩)
আলোচ্য আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহর জিকির ও স্মরণে অন্তর প্রশান্ত হয়। পবিত্র কোরআনে জিকির শব্দটি বহু জায়গায় ব্যবহূত হয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগ স্থানে পৃথক পৃথক অর্থে এ শব্দের ব্যবহার হয়েছে। আল-কোরআনে জিকির শব্দ সর্বমোট ২৬৮ বার এসেছে। ১৫৪ বার এসেছে ক্রিয়া (ফেয়েল) হিসেবে আর ১১৪ বার এসেছে বিশেষ্য (ইসম) হিসেবে। (সূত্র : ইসলাম ওয়েব, ‘লফযুজ জিকরি ফিল কোরআন’)
জিকির শব্দের প্রথম ও প্রধান
অর্থ হলো মৌখিকভাবে আল্লাহর স্মরণ বা জিহ্বার জিকির।
فَإِذَا قَضَيْتُمُ الصَّلَاةَ فَاذْكُرُوا اللَّـهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَىٰ جُنُوبِكُمْ ۚ
فَإِذَا اطْمَأْنَنتُمْ فَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ ۚ إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَّوْقُوتًا ﴿103
فَإِذَا قَضَيْتُمُ الصَّلَاةَ فَاذْكُرُوا اللَّـهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَىٰ جُنُوبِكُمْ ۚ
فَإِذَا اطْمَأْنَنتُمْ فَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ ۚ إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَّوْقُوتًا ﴿103
অতঃপর যখন তোমরা নামায সম্পন্ন কর, তখন
দন্ডায়মান, উপবিষ্ট
ও শায়িত অবস্থায়
আল্লাহর জিকির কর। অতঃপর যখন বিপদমুক্ত হয়ে যাও, তখন নামায ঠিক করে পড়।
নিশ্চয় নামায মুসলমানদের উপর ফরয নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। (সুরা : নিসা, আয়াত : ১০৩/৪)
وَسَبِّحُوهُ بُكْرَةً وَأَصِيلًا يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اذْكُرُوا
اللَّـهَ ذِكْرًا كَثِيرًا ﴿٤٢﴾ ﴿٤١﴾
‘হে ঈমানদাররা, তোমরা বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করো এবং সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৪১/২১
(٣٥) وَالذَّاكِرَاتِ
أَعَدَّ اللَّـهُ لَهُم مَّغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا وَالذَّاكِرِينَ اللَّـهَ كَثِيرًا
আল্লাহর অধিক যিকরকারী পুরুষ ও যিকরকারী নারী-তাদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও
মহাপুরষ্কার। (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৩৫/২২)
জিকির শব্দের দ্বিতীয় অর্থ হলো, উপদেশ ও
শিক্ষা গ্রহণ।
(55) وَذَكِّرْ فَإِنَّ
الذِّكْرَىٰ تَنفَعُ الْمُؤْمِنِينَ
‘তুমি (জিকির) উপদেশ করতে থাকো। কেননা জিকরা বা উপদেশ ঈমানদারদের উপকারে
আসে।’ (সুরা : জারিয়াত : আয়াত : ৫৫/27)
তারাই (জিকির) উপদেশ গ্রহণ
করে, যারা জ্ঞানী (সুরা
বাকারা আয়াত ২৬৯/৩)
অতএব জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস কর, যদি তোমাদের জানা না থাকে; (সুরা
নাহাল আয়াত ৪৩/১৪)
জিকির শব্দের তৃতীয় অর্থ কোরআন।
আমি স্বয়ং এ জিকির (কুরআন) অবতারণ
করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক। (সুরা হিজির
আয়াত ৯৯/১৪)
এবং এটা একটা বরকতময় জিকির
(কুরআন) যা, আমি নাযিল
করেছি। অতএব তোমরা কি একে অস্বীকার কর? (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৫০/১৭)
জিকির শব্দের চতুর্থ অর্থ লাওহে মাহফুজ (সংরক্ষিত ফলক)।
وَلَقَدْ كَتَبْنَا فِي الزَّبُورِ مِن بَعْدِ
الذِّكْرِ أَنَّ الْأَرْضَ يَرِثُهَا عِبَادِيَ الصَّالِحُونَ ﴿١٠٥﴾
‘আমি জিকির বা
লাওহে মাহফুজের পর জবুর কিতাবে লিখে দিয়েছি, আমার নেককার
অথবা (যোগ্যতাসম্পন্ন ) বান্দারা পৃথিবীর অধিকারী হবে।’ (সুরা
আম্বিয়া, আয়াত ১০৫/২১)
জিকির শব্দের পঞ্চম অর্থ নামাজ।
(٤٥) وَاللَّـهُ يَعْلَمُ مَا تَصْنَعُونَ وَلَذِكْرُ اللَّـهِ أَكْبَرُ ۗوَالْمُنكَرِ ۗالْفَحْشَاءِ عَنِ تَنْهَىٰ الصَّلَاةَ إِنَّ
নিশ্চয় নামায অশ্লীল ও গর্হিত কার্য থেকে বিরত রাখে। আল্লাহর
জিকির সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ জানেন তোমরা যা কর। ( সুরা আনকাবুত আয়াতঃ ৪৫/২১)
فَقَالَ إِنِّي أَحْبَبْتُ حُبَّ الْخَيْرِ عَن ذِكْرِ رَبِّي حَتَّىٰ تَوَارَتْ بِالْحِجَابِ ﴿٣٢
‘অতঃপর সে বলল, আমি তো
আমার প্রতিপালকের জিকির (নামাজ) থেকে বিমুখ হয়ে সম্পদের মহব্বতে মুগ্ধ হয়ে পড়েছি-এমনকি সূর্য ডুবে গেছে।’ (সুরা : সোয়াদ, আয়াত ৩২/২৩)
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَىٰ ذِكْرِ اللَّـهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ ﴿٩﴾ فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِن فَضْلِ اللَّـهِ وَاذْكُرُوا اللَّـهَ كَثِيرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ﴿١٠﴾
হে মুমিনগণ, জুমআর দিনে
যখন নামাযের আযান দেয়া হয়,
তখন তোমরা আল্লাহর জিকিরের (নামাজ বা খুৎবা) পানে ত্বরা কর এবং বেচাকেনা বন্ধ কর।
এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ। (9) অতঃপর
নামায সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ কর ও
আল্লাহকে অধিক জিকির কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সুরা জুমা আয়াত ৯-১০/২৮)
জিকির শব্দের ষষ্ঠ অর্থ শরিয়ত।
যাতে এ ব্যাপারে তাদেরকে পরীক্ষা করি। পক্ষান্তরে
যে ব্যক্তি তার
প্রতিপালকের জিকির (শরিয়ত) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তিনি তাকে দুঃসহ আজাবে প্রবেশ
করাবেন।’ (সুরা :
জিন, আয়াত : ১৭/২৯)
وَمَنْ أَعْرَضَ عَن ذِكْرِي
فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنكًا وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَىٰ ﴿١٢٤﴾
এবং যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা
সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব সে বলবেঃ হে আমার
পালনকর্তা আমাকে কেন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করলেন? আমি তো চক্ষুমান ছিলাম। (সুরা
তোয়াহা আয়াতঃ ১২৪-২১৫/১৬)
জিকির শব্দের সপ্তম অর্থ খবর ও
সংবাদ।
‘তারা তোমার কাছে
জুলকারনাইন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দাও, আমি তোমাদের কাছে তার জিকির (খবর বর্ণনা) করব।’ (সুরা : কাহ্ফ, আয়াত :
৮৩)
জিকির শব্দের অষ্টম অর্থ হলো স্মরণ করা
:
وَالَّذِينَ إِذَا فَعَلُوا فَاحِشَةً أَوْ
ظَلَمُوا أَنفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللَّـهَ
فَاسْتَغْفَرُوا لِذُنُوبِهِمْ وَمَن يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا اللَّـهُ وَلَمْ يُصِرُّوا عَلَىٰ مَا فَعَلُوا وَهُمْ يَعْلَمُونَ ﴿١٣٥﴾
‘তারা কোনো অশ্লীল কাজ
করে ফেললে কিংবা নিজেদের ওপর অবিচার করলে আল্লাহর জিকির করে (আল্লাহকে
স্মরণ করে) এবং
নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ ছাড়া
কে পাপ ক্ষমা করবে?’ (সুরা :
আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৫)
আল্লাহর নাম 'আল্লাহ'
শব্দের যিকিরের গুরুত্ব ।
(১) إن لك فى النهار سبحا طويلا (৭) واذكر اسم ربك و تبتل إليه تبتيلا (৮)
অর্থ : নিশ্চয় দিনের বেলায় রয়েছে আপনার দীর্ঘ কর্মব্যস্ততা।
আপনি আপনার পালনকর্তার নামের জিকির
বা স্মরণ করুন এবং একাগ্রচিত্তে তাতে মগ্ন হোন। (সূরা মুঝ্ঝাম্মিল, আয়াত ৮)
সকাল বিকাল আল্লাহ নামের যিকির করার আদেশ ।
واذكر اسم ربك بكرة وأصيلا (২৫) ومن اليل فاسجد
له وسبحه ليلا طويلا (سورة الدهر آيت ২৬)
অর্থ : এবং সকাল-সন্ধ্যায় আপন পালনকর্তার নাম স্মরণ করুন।রাত্রির কিছু অংশে তাঁর উদ্দেশে নফল নামাজ পড়ুন এবং রাত্রির দীর্ঘ সময় তাঁর তাসবীহ পাঠ করুন। পবিত্রতা বর্ণনা করুন।(সুরা দাহার, আয়াত ২৫)
'আল্লাহ' নামের যিকির দ্বারা নামাজ কবুল হওয়া ।
فَذَكِّرْ إِن نَّفَعَتِ الذِّكْرَىٰ ﴿٩﴾ سَيَذَّكَّرُ مَن يَخْشَىٰ ﴿١٠﴾ وَيَتَجَنَّبُهَا الْأَشْقَى ﴿١١﴾ الَّذِي يَصْلَى النَّارَ الْكُبْرَىٰ ﴿١٢﴾ ثُمَّ لَا يَمُوتُ فِيهَا وَلَا يَحْيَىٰ ﴿١٣﴾ قَدْ أَفْلَحَ مَن تَزَكَّىٰ ﴿١٤﴾ وَذَكَرَ اسْمَ رَبِّهِ فَصَلَّىٰ ﴿١٥﴾
(৩) قد افلح من تذكى، وذكراسم
ربه فصلي (سورة الاعلي آيت ১৫)
আপনি আপনার মহান পালনকর্তার
নামের পবিত্রতা বর্ণনা করুন, অতএব তুমি স্মরণ করিয়ে , চলোচ নিশ্চয় স্মরণ করানোতে সুফল রয়েছে।যে ভয় করে, সে উপদেশ গ্রহণ করবে, আর যে, হতভাগা, সে তা উপেক্ষা করবে, অতঃপর সেখানে সে মরবেও না, জীবিতও থাকবে না।নিশ্চয় সাফল্য লাভ করবে সে, যে শুদ্ধ হয় এবং
তার
পালনকর্তার নাম স্মরণ করে, অতঃপর নামায আদায় করে।
অর্থ : যে ব্যক্তি নফসের পবিত্রতা হাসিল করল সে সফলতা পেল এবং সে রবের নাম
"আল্লাহ" শব্দের যিকির করে অতঃপর নামাজ পড়ে। (সুরা আলা, আয়াত ১৫)
নামাজের শুরুতে আল্লাহর নাম দ্বারা নামাজ শুরু করতে হয়। যেমন 'আল্লাহু আকবার' শব্দ বলে নামাজ শুরু করতে হয়। এবং প্রত্যেক উঠা বসায় যেমন 'আল্লাহু আকবার' শব্দ যিকির করতে হয়। এইজন্যই আল্লাহ পাক বললেন, وذكراسم ربه فصلي অর্থাৎ সে তার রবের নাম
"আল্লাহ" শব্দের যিকির দ্বারা নামাজ কায়েম করে। এর দ্বারা প্রমাণিত হল,
নামাযের মত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতও যিকিরের মাধ্যমে আদায় করতে হয়।
কুরআনে আল্লাহ নামের তাসবীহ পাঠের অদেশ ।
(৪) سبح
اسم ربك الاعلي (سورة الاعلي آيت ১)
অর্থ : হে নবী!
আপনার মহান রবের নাম
"আল্লাহ" শব্দের তাসবীহ পাঠ করুন। (সুরা আলা, আয়াত ১)
জালেম, অত্যাচারী ও পাপাচার কারা হয় ।
(৫) ومن
اظلم ممن منع مساجد الله أن يذكر فيها اسمه (سورة البقرة آيت ১১৪)
অর্থ : তার চেয়ে বড় জালেম ও অত্যাচারী এবং পাপাচার আর কে হতে পারে যে ব্যক্তি আল্লাহর ঘর মসজিদসমূহে তাঁর নাম
"আল্লাহ" শব্দের যিকির করতে বাধা দেয়?
(অর্থাৎ সেই বড় জালেম ও অত্যাচারী এবং পাপাচার ব্যক্তি) (সূরা বাকারা, আয়াত ১১৪)
আল্লাহর পক্ষ থেকে মসজিদসমূহে যিকির করার অনুমতি ।
(৬) في
بيوت اذن الله ان ترفع ويذكر فيها اسمه يسبح له فيها بالغدو والاصال رجال لا
تلهيهم تجارة ولا بيع عن ذكرالله واقام الصلاة وايتاء الزكوة (سورة النور آيت ৩৬)
অর্থ : মসজিদসমূহের মর্যাদা উন্নতী করার জন্য আল্লাহ পাক আদেশ করেছেন। যে মসজিদসমূহে স্বয়ং আল্লাহ পাক তাঁর নাম
'আল্লাহ' শব্দের যিকির করার আদেশ করেছেন। সে মসজিদসমূহে এমন সব লোক সকাল সন্ধ্যা তাসবীহ পাঠ করেন ও যিকির করেন, যাদেরকে ব্যবসা বানিজ্য নামাজ কায়েম করতে ও যাকাত প্রদান করতে বাধা সৃষ্টি করে না।
(সুরা নূর, আয়াত ৩৬)
আল্লাহর নামের যিকির তাঁর বড়ত্ব সহকারে করা উচিত ।
(৭) فسبح
باسم ربك العظيم (سورة الواقعة آيت ৯৬)
অর্থ : হে নবী!
আপনার মহান রবের নাম
"আল্লাহ" শব্দের তাসবীহ পাঠ করুন। (সুরা ওয়াকিয়াহ, আয়াত ৭৪)
মসজিদই আল্লাহ নামের যিকির করার স্থান ।
(৮) ولولا
دفع الله الناس بعضهم ببعض لهمت صوامع وبيع وصلوات ومساجد يذكر فيها اسم الله
(سورة الحج آيت৪০)
অর্থ : আল্লাহ পাক যদি মানবজাতির একদলকে অপর দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন। তাহলে খ্রীষ্টানদের গির্জা ও ইহুদীদের উপাসনালয় এবং মুসলমানদের মসজিদসমূহ বিধ্বস্ত হয়ে যেত। যে উপাসনালয় গুলোতে আল্লাহর নাম
"আল্লাহ" শব্দের যিকির করা হয়ে থাকে। (সুরা হজ্জ, আয়াত ৪০)
শুধু 'আল্লাহ' শব্দের যিকির করা গুরুত্ত্বপূর্ণ সুন্নত ।
عن انس رض قال قال رسول الله
صلى الله عليه وسلم لاتقوم الساعة حتى لايقال فى الارض الله الله (رواه مسلم رقم
الحديث ৩৯২
الترمذى رقم الحديث ২৩৬৭)
অর্থ : হযরত আনাস (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত জমিনে 'আল্লাহ' 'আল্লাহ' শব্দের যিকির করা হবে। ততক্ষণ পর্যন্ত
কেয়ামত কায়েম হবে না।
(তিরমিযী শরীফ, হাদীস নং ২৩৬৭, মুসলিম শরীফ, হাদীস নং ৩৯২)
সারকথা : আল্লাহর নাম,
শুধু 'আল্লাহ' 'আল্লাহ' যিকির করা যে আল্লাহ পাকের আদেশ তার প্রমাণে চলমান এ কিতাবের যিকিরের অধ্যায়ের শুরুতে আটটি আয়াত ও দুইটি হাদীস এবং অন্যান্য দলীল প্রমাণ পেশ করা হয়েছে। এর একটি আয়াত বা একটি হাদীস কোন বিষয় প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট ছিল। তারপর যে বিষয়ের উপর অনেকগুলো আয়াত ও হাদীস বিদ্যমান এবং আকাবের বুযুর্গগণ থেকে এর প্রমাণ ও আমল বিদ্যমান। সে বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করা বা না জায়েয ও বেদআত বলা যে কত বড় অপরাধ তা সহজেই বুঝা যায় এবং একথাও বুঝা যায় যে,
তারা কুরআন হাদীস ও আকাবের বুযুর্গগণের জীবনী ও আমল সম্পর্কে কত বেশী অন্ধ ও অজ্ঞ। কারণ স্বয়ং কুরআন পাকে আল্লাহ পাক আটটি আয়াতে তাঁর নাম
'আল্লাহ' শব্দের যিকির করার আদেশ করেছেন। সুতরাং যারা তাঁদের রবের নাম জানবেন তাঁরা জ্ঞানী ও বিজ্ঞ হবেন এবং তাঁরা সে নামের যিকির করবেন। পক্ষান্তরে যারা তাদের রবের নাম কি তা জানবেন না তারা অজ্ঞ ও মুর্খ হবে। তাই তারা 'আল্লাহ' 'আল্লাহ' যিকির করাকে বেদআত বলবে। আর যিকিরকারীদেরকে বেদআতী বলবে ও খারাপ চোখে দেখবে। বর্তমান বিশ্বে অল্প কিছু মানুষ আল্লাহর যিকির করেন। আর বেশীর ভাগ যিকির করে না। সে বেশীরভাগ মানুষ যিকির করাকে বেদআত ফতোয়া দিয়ে থাকে। যিকিরকারীদের সংখ্যা কম হওয়ার কারণ হল,
শতকরা একজন মানুষ যখন জান্নাতী হবেন। তখন তারাই যিকির করে জান্নাতে যাওয়ার সৌভাগ্য হাসিল করতে পারবেন। আল্লাহ পাক সঠিক বিষয় জেনে তার অনুসরণ করার তৌফিক দান করুন, আমিন।
No comments