Header Ads

রাসূলুল্লাহ ﷺ ১১ জনকে বিয়ে করেছিলেন কেন ?



রাসূলুল্লাহ ১১ জনকে বিয়ে করেছিলেন কেন ?  
নাস্তিকদের প্রশ্নের জবাব

সাধারণ মুসলিমের মনে একটা প্রশ্ন প্রায়ই ঘুরপাক খায়, তা হলো রাসূলুল্লাহ এতগুলো বিয়ে করতে গিয়েছিলেন কেন? সাধারণ মুসলিম পুরুষ না ৪টার বেশী বিয়ে করতে পারে না? উনি তাহলে ১১টা বিয়ে করলেন কেন? –বর্তমান সময় যখন অনলাইনে ও অফলাইনে নাস্তিকতা ও ইসলাম-বিদ্বেষ চরম আকার ধারণ করেছে তখন সাধারণ মুসলিমের জন্য এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা জরুরী হয়ে পড়েছে। এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আছে এবং এই লেখায় আমি সেই উত্তর দিব। কিন্তু সেই উত্তরে যাওয়ার আগে ছোট্ট একটা ভূমিকার অবতারণা করতে হচ্ছে।

উত্তর বুঝার প্রি-রিকুইসিট জ্ঞান:
অবশ্যই রাসূলুল্লাহ  সব মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মানুষ এবং তিনি নিষ্পাপ, কিন্তু একথাও মনে রাখতে হবে তিনি আমাদের মতই রক্ত-মাংসের একজন মানুষ, যাকে তাঁর ঈমান ও আমলের কারণে আল্লাহ্‌ বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন।
বলুন, “আমি তো তোমাদের মতই একজন মানুষ যার উপর প্রত্যাদেশহয়েছে যে তোমাদের উপাস্যএকমাত্র আল্লাহ্‌, তাই তাঁরই পথ অবলম্বনকরো এবং তাঁরই কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো (সূরাফুসসিলাত ৪১:)
আমাদের মধ্যে যেমন আশা-আকাংক্ষা, দু:খ-কষ্ট, অস্থিরতা-রাগ আছে, রাসূলুল্লাহ এর মধ্যেও এর সবই উপস্থিত ছিল। তাঁর সাথে আমাদের পার্থক্য হলো তিনি এগুলোকে নিজের নিয়ন্ত্রণের রাখতে পারতেন, আমরা কখনো পারি, কখনো পারি না। আমাদের মধ্যে যেমন কামনা-বাসনা আছে, স্বাভাবিকভাবে মানুষ হিসাবে তাঁর মধ্যেও এগুলো ছিল। আমরা যেমন সুন্দরের প্রতি আকৃষ্ট হই, তিনিও সুন্দরের প্রতি আকর্ষণ বোধ করতেন। আমাদের সাথে তাঁর পার্থক্য হলো আমরা আমাদের বাসনা পূরণের জন্য আল্লাহর  দেয়া সীমা লঙ্ঘন করে ফেলি, যার দিকে তাকানো উচিত নয় তার দিকে তাকাই, যার সাথে সম্পর্ক করা আল্লাহর  বিধানের বাইরে তার সাথেও সম্পর্ক করি। কিন্তু, রাসূলুল্লাহ তাঁর চাহিদা পূরণের জন্য কখনোই আল্লাহর  দেয়া সীমাকে লঙ্ঘন করেননি, সর্বাবস্থায় আল্লাহর  হুকুম মেনে চলেছেন।
রাসূলুল্লাহ (বা যে কোন মানুষের) যে কোন কাজ সম্পর্কে আমাদের আপত্তি থাকবে না যদি তা নিচের দুইটা বিষয়কে মেনে চলে

এক যদি তা আল্লাহর  দেয়া সীমার মধ্যে থাকেঅর্থাৎ, আল্লাহ্‌ যদি কোন কিছুকে হালাল করে থাকেন তাহলে সেটা করলে দোষের কিছু নেই।
দুই যদি কাজটি ঐ সমাজে গ্রহণযোগ্য হয়ে থাকে।
(নামাজ,রোজা তথা ইবাদতের ক্ষেত্রে এই ২য় শর্তটি পূরণ হওয়া জরুরি নয়, কিন্তু পার্থিব কাজ যেমন বিয়ে, যুদ্ধ ইত্যাদির (worldly affairs) ক্ষেত্রে এই শর্তটি গুরুত্বপূর্ণ)

উদাহরণস্বরূপ রাসূলুল্লাহ এর বহু বিবাহের কথা ধরা যাক। আমরা জানি রাসূলুল্লাহ বহু বিবাহ করেছেন এটার অনুমতি আল্লাহর  কাছ থেকেও আছে, আবার তৎকালীন সমাজেও এটা গ্রহণযোগ্য প্র্যাক্টিস ছিল কাজেই রাসূলুল্লাহ এর বহুবিবাহ নিয়ে কোন মুসলিমের আপত্তি থাকবে না।
আবার বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থায় সাধারণভাবে বহু বিবাহ গ্রহণযোগ্য নয়। কাজেই কোন মুসলিম যদি সক্ষমতা থাকার পরেও সামাজিক গ্রহণযোগ্যতার কথা বিবেচনা করে বহুবিবাহ না করে তাহলেও আমরা বলব সে ঠিক করেছে। অন্যদিকে, পশ্চিমা বিশ্বে সমকামিতা একটি গ্রহণযোগ্য আচরণ, কিন্তু একজন মুসলিম হিসাবে আমরা এই আচরণের পক্ষে নই কারণ এটা আল্লাহর  দেয়া সীমার বাইরে।
এখানে বলে রাখা ভাল যে, ইসলামিক আইন যদিও কুরআন, সুন্নাহ, ইজমাও কিয়াসের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত, কিন্তু এর প্রয়োগ আরো কিছু বিষয়ের উপর নির্ভর করে যার মধ্যে আছে –  মাসলাহা মুরসালা জনতার বৃহত্তর স্বার্থ) ও উরফ সামাজিক রীতি)।
উপরের প্রি-রিকুইসিট জ্ঞানকে মাথায় রেখে এবার আসুন সরাসরি প্রশ্নে চলে যাওয়া যাক।

প্রশ্ন ইসলামের যেখানে ১জন পুরুষের জন্য ৪জন স্ত্রী রাখার অনুমতি আছে, সেখানে মুহাম্মাদ কিভাবে ১১টা বিয়ে করলেন? তাঁর বৈবাহিক জীবন কি অস্বাভাবিক নয়?
রাসূলুল্লাহ এর  ১১জন স্ত্রী ছিল, যার মধ্যে ৯ জন একসাথে স্ত্রী হিসাবে ছিল (বাকী ২ জনের মৃত্যু হয়েছিল)।  তাঁর স্ত্রীদেরকে আমরা সম্মানের সাথে উম্মাহাতুল মুমিনীন (ঈমানদারদের মাতা) বলে থাকি।
যদিও একজন মুসলিমের জন্য চারজনের বেশী স্ত্রী রাখার অনুমতি নেই, কিন্তু রাসূলুল্লাহ কে আল্লাহ্‌ চার এর বেশী স্ত্রী রাখার অনুমতি দিয়েছিলেন। আর এই অনুমতি দেয়া হয়েছে নিচের আয়াতের মাধ্যমে।
হে নবী, আমি আপনার জন্য বৈধ করেছি আপনার স্ত্রীদেরকে যাদের আপনিদেনমোহর দিয়েছেনআর কোন ঈমানদার নারী নবীর কাছে নিবেদনকরলে আর নবী তাকে বিয়ে করতে চাইলে সে বৈধআর শুধু আপনারইজন্য, বাকী মুমিনদের জন্য নয়  [সূরা আহযাব ৩৩:৫০]
কিন্তু প্রশ্ন হলো এই সুবিধা রাসূলুল্লাহ কে দেয়ার কারণ কি? আসুন এর কয়েকটা কারণ দেখা যাক

রাসূলুল্লাহ এর শারিয়াহ কিছুটা ভিন্ন ছিল
রাসূলুল্লাহ এর শারিয়াহর কিছু অংশ সাধারণ মুসলিমদের থেকে ভিন্ন ছিল। এই ভিন্ন শারিয়াহ তাকে সুবিধা কিছু দিয়েছিল, কিন্তু দায়িত্ব দিয়েছিল তার চেয়ে অনেক বেশী। যেমন রাসূলুল্লাহ   এর জন্য প্রতিরাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া ওয়াজিব ছিল, একবার যুদ্ধের সরঞ্জাম পড়ে ফেলার পর যুদ্ধে না যাওয়া তাঁর জন্য হারাম ছিল, দান গ্রহণ করা তাঁর জন্য হারাম ছিল, মৃত্যুর সময় পরিবারের জন্য একটা পয়সা সম্পদ রেখে যাওয়াও তাঁর জন্য হারাম ছিল, এমন কি আজ পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ এর বংশধরের কেউ যতই দরিদ্র হোক না কেন যাকাত নিতে পারবে না।  এত কঠিন কঠিন নিয়মের বিপরীতে আল্লাহ্‌ তাঁকে খুব অল্প কিছু বিধানে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন, তার মধ্যে একটি হলো চারটির বেশী স্ত্রী রাখার অনুমতি।



রাসূলুল্লাহ চাইলে আরো বেশী বিয়ে করতে পারতেন
রাসূলুল্লাহ তাঁর যৌবনের প্রাইম টাইম একজন মাত্র স্ত্রীর সাথেই কাটিয়েছিলেন ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত তাঁর একজন মাত্র স্ত্রী ছিল। অথচ বহুবিবাহ করা আরব সমাজে একটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল এবং তিনি চাইলেই তখন একাধিক বিয়ে করতে পারতেন।  আমাদের সমাজে যেমন বিয়ের সময় ছেলেদের যোগ্যতা দেখা হয় তার পড়াশুনা, চাকরি-বাকরি, আয়-রোজগার দেখা হয়, তৎকালীন আরব সমাজে বিয়ের সময় একটা ছেলে বা মেয়ের একটা বৈশিষ্ট্যই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন ছিল তা হলো বংশমর্যাদা। রাসূলুল্লাহ ছিলেন আরবের সবচাইতে সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশের সবচাইতে সম্মানিত ও লিজেন্ডারি ব্যক্তিত্ব আব্দুল মুত্তালিব এর সবচেয়ে প্রিয় নাতি। তাই তিনি চাইলে যৌবনে ও নবুয়তির আগে ১০-১২টা বিয়ে করা তার জন্য কোন ব্যাপারই ছিল না, কিন্তু তা তিনি করেন নি।

সেই সমাজে বিয়ে ছিল ঐক্য প্রতিষ্ঠার একটি অন্যতম উপায়
বর্তমানে আমরা যে সমাজে বাস করি তাতে বিয়ের উদ্দেশ্য একটাই থাকে সামাজিক মর্যাদা অনুযায়ী একটা ছেলে / মেয়েকে তার জীবনসঙ্গীর সাথে মিলিয়ে দেয়া। কিন্তু, আরব সমাজে রাষ্ট্রবলে কিছু ছিল না এবং এক গোত্রের সাথে আরেক গোত্রের ঝগড়া-যুদ্ধ লেগেই থাকত। সেকালে সামাজিকভাবে সুরক্ষিত থাকার একমাত্র উপায় ছিল গোত্রবদ্ধ হয়ে চলা, তাই সেই সমাজে বিয়ের আরেকটি অন্যতম কারণ ছিল অন্য পরিবার বা অন্য গোত্রের সাথে সম্পর্কের উন্নয়ন করা।  আর রাসূলুল্লাহ যেহেতু আরবদের ৩ হাজার বছরের পুরনো রীতি-নীতিকে পরিবর্তন করে মাত্র ২৩ বছরে সম্পূর্ণ নতুন রাষ্ট্র-ব্যবস্থা ইসলামের প্রবর্তন করছিলেন, কাজেই এটা তার জন্য খুব জরুরী ছিল যে তিনি বিয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন গোত্রের সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করবেন। এই দিক থেকে চিন্তা করলে, বহুবিবাহের অনুমতি রাসূল্ললাহর জন্য কোন সুবিধা ছিল না, বরং ছিল এক মহা দায়িত্ব।

নিচে রাসূলুল্লাহ এর স্ত্রীদের তালিকা ও বিয়ের মূল কারণ উল্লেখ করা হল।

স্ত্রীর নাম
বিয়ের মূল কারণ
বিয়ের সাল
মন্তব্য
খাদিজা বিনতে খুয়াইলিদ (রা)
সাধারণ সামাজিক বিয়ে
নবুয়তের ১৫ বছর পর্বে।
খাদিজার প্রস্তাবে দুই পরিবারের সম্মতিতে সাধারণ বিয়ে। এটা ছিল খাদিজার ৩য় বিয়ে।খাদিজা (রা) জীবিত থাকতে রাসূলুল্লাহ আর কোন স্ত্রী গ্রহণ করেননি। খাদিজার মৃত্যুর সময় রাসূলুল্লাহ র বয়স ছিল ৫০ বছর।  তাঁরা দীর্ঘ ২৫ বছর সংসার করেছিলেন।
সাওদাবিনতে জামআ (রা)
সাধারণ সামাজিক বিয়ে
নবুয়তের ১০ম বছর
রাসূলুল্লাহ র খালা খাওলা এর পরামর্শে দুই পরিবারের সম্মতিতে সাধারণ বিয়ে।
আয়শা (রা) বিনতে আবু বকর (রা)
সাধারণ সামাজিক বিয়ে ও বন্ধু আবু বকর (রা) এর সাথে পারিবারিক সম্পর্ক স্থাপন।এছাড়াও এতে আল্লাহর   পরোক্ষ নির্দেশ ছিল। (বুখারি)
বিয়ের প্রতিশ্রুতি: নবুয়তের ১১ তম বছর।একসাথে বসবাস শুরু: ১ম হিজরী
রাসূলুল্লাহ র খালা খাওলা এর পরামর্শে দুই পরিবারের সম্মতিতে সাধারণ বিয়ে।আয়শা জিনিয়াস ছিলেন। তিনি কুরআন, হাদিস, ইসলামি আইন, প্রাচীন কবিতা ও বংশ-জ্ঞান (Geneology) এ এক্সপার্ট ছিলেন। অন্যতম সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারী।  তিনি রাসূলুল্লাহর একমাত্র কুমারী স্ত্রী
হাফসা (রা) বিনতে উমার ইবনুল খাত্তাব (রা)
বন্ধু উমার(রা) এর সাথে পারিবারিক সম্পর্ক স্থাপন
৩য় হিজরী
এটা হাফসার দ্বিতীয় বিয়ে।  আগের বিয়ে তিনি ১১ বছর বয়সে করেছিলেন।
যাইনাব বিনতে খুযাইমা (রা)
যাইনাবের দানশীলতার পুরষ্কার ও উত্তরের নাজদি অঞ্চলের সাথে সম্পর্ক স্থাপন
৪র্থ হিজরী
এটা ছিল তাঁর তৃতীয় বিয়ে। যাইনাব তাঁর দানশীলতার জন্য বিখ্যাত ছিলেন। উহুদের যুদ্ধে তাঁর স্বামী শহিদ হওয়ার পর এরকম মহান নারীর জন্য রাসূলুল্লাহ ছিলেন একমাত্র যোগ্য স্বামী। বিয়ের ৮ মাস পর তিনি ইন্তেকাল করেন।
উম্মে সালামা(রা)অন্য নাম: হিন্দ বিনতে আবু উমাইয়া
উম্মে সালামার ঈমান ও আমলের পুরষ্কার
৫ম হিজরী
এটা ছিল তাঁর দ্বিতীয় বিয়ে। তাঁর স্বামী উহুদের যুদ্ধের আঘাতে শহীদ হন। মৃত্যুর সময় তাঁর স্বামী দুআ করেছিলেন তিনি যেন তার চাইতেও ভালো একজনকে স্বামী হিসাবে পান। আল্লাহ্‌ সেই দুআ রাসূলুল্লাহ এর মাধ্যমে কবুল করেন। উম্মে সালামা বহু হাদিস বর্ণনা করেছেন।
যাইনাববিনতে জাহশ (রা)
আল্লাহর  নির্দেশ (সূরা আহযাব:৩৭) ও পালক পুত্র যে নিজের পুত্র নয় এই ধারণা সমাজে প্রতিষ্ঠা করা
৫ম হিজরী
এটা তাঁর ২য় বিয়ে। যাইনাব কুরাইশি ছিলেন ও রাসূলুল্লাহর ফুপাত বোন ছিলেন। আরব সমাজে, কাযিনদের মধ্যে বিয়ে হওয়া খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার ছিল। আনাস(রা) বলেন রাসূলুল্লাহ যদি কোরআনের কোন আয়াত লুকাতেন তাহলে যাইনাবের সাথে বিয়ের আয়াতটাকেই লুকাতে চাইতেন (বুখারী)। শুধু আল্লাহর  হুকুম পালনের জন্যই রাসূলুল্লাহ এই বিয়েটা করেন।
যুয়াইরিয়াহবিনতে আল-হারিস (রা)
বানুল মুস্তালিকের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন
৫ম হিজরী
এটা তাঁর ২য় বিয়ে। তিনি ছিলেন বানুল মুস্তালিক গোত্রপ্রধানের মেয়ে। যুয়াইরিয়াকে যুদ্ধবন্দি হিসাবে গ্রহণ করার পর রাসূলুল্লাহ তাকে মুক্ত করেন এবং বিয়ে করেন। এভাবে রাসূলুল্লাহ যুদ্ধবন্দিদের মুক্তি দেয়ার ব্যাপারে উৎসাহ দেন।  শত শত সাহাবী যুদ্ধবন্দীদের মুক্তি করে দেন।  এই বিয়ের ফলে সম্পূর্ন বানুল মুস্তালিক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে।
উম্মে হাবিবাবিনতে আবু সুফিয়ান (রা)অন্য নাম: রামলা
কুরাইশদের মধ্য থেকে শত্রুভাব অপসারণ
৭ম হিজরী
এটা তাঁর ২য় বিয়ে। তৎকালীন মুশরিক কুরাইশদের অবিসংবাদিত নেতা আবু সুফিয়ানের মেয়ে। কুরাইশদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে উম্মে হাবিবা আবিসিনিয়ায় চলে যান যেখানে তাঁর স্বামীর মৃত্যু হয়, পরে রাসূলুল্লাহ তাঁকে বিয়ে করেন। এই বিয়ে অনেক মুশরিকের মধ্যে রাসূলুল্লাহ ও ইসলামের প্রতি ভালবাসা তৈরীতে সাহায্য করে।
১০
সাফিয়াবিনতে হুয়াই (রা)
ইহুদীদের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন
৭ম হিজরী
এটা তাঁর ২য় বিয়ে। তিনি ছিলেন ইহুদীদের বনু নাদির গোত্রের নেতার মেয়ে। তিনি প্রথম থেকেই বাবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ইসলাম ধর্মকে পছন্দ করতেন। খন্দকের যুদ্ধে তাঁকে যুদ্ধবন্দি হিসাবে গ্রহণ করা হয়। রাসূলুল্লাহ তাঁকে মুক্তি দেন ও বিয়ে করেন। এর মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ যুদ্ধবন্দি মুক্তিতে উৎসাহ দেন ও এটাও প্রমাণ করেন ইহুদীদের প্রতি মুসলিমদের কোন জাতিগত বিদ্বেষ নেই।
১১
মাইমুনাহবিনতে আল-হারিস(রা)ইসলাম-পূর্ব নাম: বাররাহ
চাচা আব্বাসের অনুরোধে ও কুরাইশদের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন
৮ম হিজরী
এটা তাঁর ২য় বিয়ে। হুদায়বিয়ার সন্ধির পরের বছর রাসূলুল্লাহ যখন উমরা করতে মক্কা আসেন তখন চাচা আব্বাস (রা) তাঁকে অনুরোধ করেন মাইমুনাকে বিয়ে করতে।  এই বিয়ের পর রাসূল্ললাহ মক্কার কুরাইশদেরকে (যারা তখনও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেনি) তাঁর ওয়ালিমায়  দাওয়াত দেন ও এভাবে তাদের সাথে সম্পর্কের উন্নয়নের চেষ্টা করেন।

উপরের তথ্য থেকে আমরা দেখতে পাই যে, রাসূলুল্লাহ তাঁর বিয়েগুলো যে সব কারণে করেছিলেন তার মধ্যে আছে স্বাভাবিক সামাজিক কারণ, কোন বন্ধুর সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করণ, কোন গোত্রের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন, অথবা যে গুণবতী নারীর স্বামী শহীদ হয়েছে তাঁকে সম্মানিত করার জন্য।  আর এই বিয়েগুলোর ক্ষেত্রে সেই নারীর সৌন্দর্যও যদি রাসূলুল্লাহ কে আকর্ষণ করে থাকে তাতে দোষের কিছু নেই। একজন পুরুষ তো তাকেই বিয়ে করতে চাইবে যাকে তার সুন্দর লাগে এটাই তো স্বাভাবিক বায়োলজিকাল ব্যাপার।

রাসূলুল্লাহ জোর করে কাউকে বিয়ে করেন নাই
রাসূলুল্লাহ কখনোই জোর করে কাউকে বিয়ে করেননি। তিনি যাদেরকে বিয়ে করেছেন তাঁরা প্রত্যেকেই রাসূলুল্লাহ এর স্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। যে তাঁর স্ত্রী হতে চায়নি, তাকে তিনি বিয়ে করেননি।
সাহিহ বুখারীতে বর্ণিত একটি হাদিস থেকে আমরা একটি ঘটনা জানি যেখানে উমাইমাহ বিনতে শাহরিল নামক এক মহিলা প্রাথমিকভাবে রাসূলুল্লাহ এর  স্ত্রী হতে সম্মতি জানায়। কিন্তু, বিয়ের রাতে সেই মহিলা তার মত পরিবর্তন করে ও স্ত্রী হতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে। রাসূলুল্লাহ কে দেখে সে বলে উঠে – “আমি আপনার থেকে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছি  জবাবে রাসূলুল্লাহ বলেন – “তুমি সবচাইতে বড়র কাছেই আশ্রয় চেয়েছ। যাও, তুমি তোমার পরিবারের কাছে ফিরে যাও।”   এভাবে করে বিয়ে কনসুমেট (স্বামী-স্ত্রী হিসাবে একসাথে থাকা) করার আগেই রাসূলুল্লাহ উমাইমাহকে ডিভোর্স দিয়েছিলেন। অন্য কিছু বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ কে অপদস্থ করার জন্য কাফেররা মহিলাটাকে দিয়ে এরকম করিয়েছিল। ইতিহাসের বইগুলোতে এরকমও পাওয়া যায় যে এই মহিলা তার বাকী জীবন রাসূলুল্লার বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়ার জন্য আফসোস করতে করতে কাটিয়েছিল।

রাসূলুল্লাহ জোর করে কোন স্ত্রীকে ধরে রাখেন নাই
রাসূলুল্লাহ তো জোর করে কাউকে বিয়ে করেন নাই, জোর করে কাউকে বিয়ের পরে ধরেও রাখেন নাই। বরং, তাঁর যে কোন স্ত্রী চাইলেই তাঁকে ছেড়ে চলে যেতে পারতেন।
হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে বলুন, “তোমরা যদি পার্থিব জীবনেরভোগ বিলাসিতা কামনাকর, তবে এসো, আমি তোমাদেরকে ভোগবিলাসেরব্যবস্থা করে দেই আর তোমাদেরকে ভদ্রতারসাথে বিদায় দেই আর তোমরাযদি আল্লাহ্‌, তাঁর রাসূল পরকাল চাও, তবে তোমাদের মধ্যে যারাসৎ কর্মকরে আল্লাহ্তাদের জন্য মহাপ্রতিদান প্রস্তুত করে রেখেছেন (সূরা আহযাব৩৩:২৮২৯)
হাদিস থেকে আমরা বরং দেখি, রাসূলুল্লাহ এর স্ত্রীরা তাঁর কাছে ডিভোর্স তো চানই নি বরং প্রত্যেকেই যতদিন বেঁচে ছিলেন ততদিন প্রশংসা করেছিলেন যে স্বামী হিসাবে রাসূলুল্লাহ কতটা মহৎ ছিলেন।

ইসলাম প্রতিষ্ঠার পর তিনি আর বিয়ে করেন নাই
আমরা লক্ষ্য করলে দেখব যে রাসূলুল্লাহ এর ৭টি বিয়েই হয়েছে ৩য় থেকে ৮ম হিজরীর সময়। এটা ছিল রাসূলুল্লাহ এর জীবনের সবচেয়ে আন্দোলিত সময়, যখন মুসলিমরা বিভিন্ন গোত্রের সাথে যুদ্ধে যাচ্ছে, আবার বিভিন্ন গোত্রের সাথে শান্তিচুক্তি করছে। কাজেই, এই সময় এই বিয়েগুলো ছিল রাজনৈতিক ও সামাজিক সংস্কারের অংশ বিশেষ। তিনি যদি নারীলোভীই হয়ে থাকবেন তাহলে তো এর আগে-পরেও তাঁর অনেক বিয়ে করার কথা ছিল। শুধু তাই না, রাসূলুল্লাহ বেঁচেছিলেন ১১ হিজরী পর্যন্ত। কিন্তু, ৭ম হিজরির হুদায়বিয়ার সন্ধি ও হুনাইনের যুদ্ধে বিজয়ের পরে আরব ভূখন্ডে মুসলিমদের একচ্ছত্র আধিপত্য সময়ের ব্যাপারে হয়ে দাঁড়ায় আল্লাহ্‌ নিজেই সূরা ফাতহ তে হুদায়বিয়ার সন্ধিকে পরিষ্কার বিজয়হিসাবে উল্লেখ করেছেন। আর তাই আমরা দেখতে পাই, ৯ম-১১তম হিজরীতে রাসূলুল্লাহ গোত্রভিত্তিক সম্পর্ক উন্নয়নে আর কোন বিয়েও করেননি। তিনি যদি আসলেই শুধু নিজের চাহিদায় বিয়ে করে থাকতেন তাহলে তিনি ঐ শেষের ২ বছরেও বিয়ে করা করা থামাতেন না।

তথ্য সূত্র:
১) শেইখ ইয়াসির কাযীর সীরাহ লেকচার
২) ড. সাল্লাবির সীরাহ বই

No comments

Comments System

Theme images by merrymoonmary. Powered by Blogger.